নাইরোবি

বিমান থেকে বাইরে পা রাখতেই গরম বাতাসের ঝাপটা লাগলো চোখে মুখে। আকাশে কোন মেঘ নেই, সকাল ১০ টায় এত প্রখর রৌদ্র! নাইরোবি ঠিক বিষুব রেখা থেকে ১ ডিগ্রি দক্ষিনে। অক্টোবর এর শেষ, তাই সূর্যটা আসলেই অনেক বেশি কাছে আমাদের। দ্রুত টার্মিনাল বিল্ডিঙের দিকে এগুলাম। দুবাইতে যে এলাহি কারবার ছিল, এখানে এসে মনে হল বাংলাদেশে ফিরে এসেছি, ঠিক আমাদের চিটাগং এয়ারপোর্টের মত লাগলো দেখতে অনেকটা।

ভ্রমণ টিপ

নাইরোবি বিমানবন্দরে সতর্ক থাকুন - ব্যাগ চুরি একটি সাধারণ সমস্যা। সবসময় আপনার জিনিসপত্র নজরে রাখুন এবং মূল্যবান জিনিস হাতে বা সামনের পকেটে রাখুন।

রানা স্যার বললেন, ব্যাটা, ব্যাগ সাবধান! এই খানে ব্যাগ চুরি নাকি খুব সাধারন ব্যাপার। প্রমান অবশ্য পেলাম কিছুক্ষণের মধ্যেই। এক ডেনিশ বুড়ো আকুতি করছে বিরস বদনে কাউন্টারে বসে থাকা এক মহিলার কাছে, কেবা কাহারা বুকিং কাউন্টারের কাছ থেকে মেরে দিয়েছে তার হাত ব্যাগ! কাধের ব্যগটাকে জাপটে ধরে বসে থাকলাম, বাকিটা সময়।

নাইরোবির মানুষ গুলোকে দেখে মনে হল আমাদের গ্রামের "আকবর চাচা" টাইপ। মানে আকার আকৃতি অনেকটা মিলে যায়। কালো বলতেই সব যে একরকম তা নয়; বরং বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে। রানা স্যার আমার ক্লাস নিতে শুরু করলেন; এবং আমার কান আবার গরম হতে শুরু করল! স্যারের এটা তৃতীয় শান্তি রক্ষা মিশন, আফ্রিকা এবং এর মানুষ তিনি বেশ ভাল করেই চেনেন। তবে ক্লাসের শেষে আমি 'পম গানা' তরুণী আর লাইবেরিয়ান তরুণীকে আলাদা করতে পারলাম! আমার দ্রুত শেখার গতি দেখে স্যার মাথা নেড়ে বললেন, "তর হবে"। আমি দাত কেলাইলাম শুধু বিব্রত ভঙ্গিতে।

মজার তথ্য

আফ্রিকা-ক্যারিবিয়ান-দক্ষিণ এশিয়ার কালো স্কিনটোনে আছে হাজারো শেড। চকলেট, কফি, মেহগনি, মিডনাইট... গবেষণায় শুধু ‘ডার্ক স্কিন’ ক্যাটাগরিতেই ৪০+ ভ্যারিয়েশন! স্ট্যান্ডার্ড প্যালেট নয়, এটা লিমিটেড এডিশন

বিমানে উঠবার ডাক এলো, এবার দেখি আরও ছোট একটা বিমান। তিন জনের সিট, আমি জানালার পাশে বসলাম। পাশে বসলো গানার এক মোটাসোটা মহিলা আর তার পাশে লাইবেরিয়ার এক তরুণী। বাঙালি ভদ্রতা বসতও আমি যতটা সম্ভব স্পর্শ এড়ানোর চেস্টা করছিলাম; গানার মহিলার দেখি ঐসব কোন বালাই নেই। তার ঠ্যাং দিয়ে আমাকে প্রায় কোণঠাসা করে আরকি! আমিও ভাবলাম, যস্মিন দেশে যদাচার, Excuse me বলে নড়ে চড়ে নিজের জায়গা করে নিলাম। গানার মহিলাটা খুব সুইট একটা হাসি উপহার দিল আমাকে।

"যস্মিন দেশে যদাচার" - প্রতিটি দেশের নিজস্ব রীতিনীতি ও আচরণ রয়েছে, সেগুলো মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

- প্রাচীন প্রবাদ

ঘানার পথে

বিমান উড়বার সাথে সাথে বাহিরে মন দিলাম, নিচে আফ্রিকার বিশাল প্রান্তর। কিছু ছবি তুলতে চেষ্টা করলাম এইবার।

আফ্রিকার আকাশপথ থেকে তোলা ছবি

আফ্রিকার আকাশপথ থেকে তোলা দৃশ্য

আফ্রিকা মহাদেশে সম্পর্কে আমার পূর্বের ধারণা পালটাচ্ছিল একটু একটু করে। আফ্রিকা মানেই মনে হত সবুজ তৃণভূমি, যেমনটা 'ডিসকভারি' চ্যানেলে দেখায় আরকি। বাস্তবে তা নয়; বরং আমার মনে হল আফ্রিকা সূর্যের আগুনে জ্বলতে থাকা এক মরু প্রান্তর, যেখানে বেঁচে থাকা একটা যুদ্ধ।

একটা জ্বালা মুখ দেখলাম, আমার দেখা প্রথম, ছবি তুলে রাখলাম। পাশের মহিলাটিকে বললাম Do you know the name of it? সে প্রায় আমার উপর হুমড়ি খেয়ে দেখতে গেল কি জিনিস! আমি মনে বললাম, হে ধরনী দ্বিধা হও, মুখে বললাম, thanks a Lot! সে বলল, No problem, ANYTIME!

ঘানা সম্পর্কে

ঘানা পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ যা ১৯৫৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এটি সাহারা-নিম্ন আফ্রিকার প্রথম দেশ যেটি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তি পায়। ঘানার অর্থনীতি সোনা, কোকোয়া, এবং তেল রপ্তানির উপর নির্ভরশীল।

হটাত নিচে দেখি বিশাল এক নীল সমুদ্র, এমন নীল দেখেছিলাম বঙ্গোপসাগরের অনেক গভীরে। যে নীল মনে হাহাকার জাগায়! মনে হয়, এমন নীলে মিশে যাওয়া যায়! আমার নিচে আটলান্টিক মহাসাগর!

আটলান্টিক মহাসাগরের দৃশ্য

আটলান্টিক মহাসাগরের নীল জলরাশি

মজার তথ্য

আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর এবং এটি প্রায় ১০৬.৪ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এর গড় গভীরতা ৩,৬৪৬ মিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা পুয়ের্তো রিকো ট্রেঞ্চে ৮,৩৭৬ মিটার।

দু'চোখে গিলছিলাম, অস্ফুটে বলে উঠলাম, Its beautiful! পাশের জন আবার হুমড়ি খেল, "What is it?", আমি বললাম "হে ধরনী দ্বিধা হও"; সে বলল স্মিত হেসে, No problem, ANYTIME!

চলবে...।